প্রাইভেট ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ
প্রাইভেট ব্যাংক জবের সুযোগ সুবিধা সাধারণত 8 থেকে 9 টি জায়গায় দেখা যায়। প্রথমত, ভালো কর্মসংস্থান পরিবেশ। দ্বিতীয়তঃ এখানে বিশেষ প্রফিটেবল সুবিধা আছে। তাছাড়া প্রাইভেট ব্যাংকে বেতন-ভাতাদি ভালো পরিসরে দেয়া হয়। আরো আছে পদোন্নতি সুবিধা।
প্রাইভেট ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা সম্বন্ধে জানাতে এই ব্লগ। যদি প্রাইভেট ব্যাংকিংকে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তবে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা গুলোকে প্রথমে তুলে ধরতে হবে। সম্পূর্ণ ব্লগ পড়বেন। তাহলে নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। বাংলাদেশের প্রাইভেট ব্যাংকের সুযোগ সুবিধাগুলো তুচ্ছ করা মোটেও উচিত নয়। প্রাইভেট ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানাবো। যারা প্রাইভেট ব্যাংক নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন, তারা অবশ্যই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবেন।
এবং নিজের প্রয়োজনে ছুটিও নেয়া যায়। প্রাইভেট ব্যাংক আপনার চিকিৎসার জন্য নিজস্ব ওয়েলফেয়ার ফান্ড রাখে। তাছাড়াও আছে এখানে নিজস্ব প্রভিডেন্ট ফান্ড। যেখান থেকে আপনি দরকারে লোন সুবিধা নিতে পারেন। বর্তমান প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি নিরাপত্তা দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। এবার প্রতিটি বিষয় বর্ণনা করে বলছি।
১)ভালো কর্ম-পরিবেশঃ (Great work- environment)
প্রাইভেট ব্যাংক তার কর্মচারীদেরকে একটি প্রফেশনাল ও সুন্দর কাজের পরিবেশ দিতে দায়বদ্ধ। এরকম কাজ করার পরিবেশ যে কারোরই মানসিক প্রেসার থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী। প্রাইভেট ব্যাংকে রয়েছে টার্গেট এবং লক্ষ্য স্থির করার প্রফেশনাল দায়িত্ব। এমন অবস্থায় আপনাকে প্রতিদিনের মতোই প্রাইভেট ব্যাংক স্ট্রাগল করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে।
এমতাবস্থায় প্রাইভেট ব্যাংকের অথোর চাইবে, নিজস্ব কর্মসংস্থান পরিবেশকে আরামদায়ক রাখার জন্য। যাতে করে তাদের কর্মজীবীদের মন ফ্রেস ও সুস্থ্য থাকে।
প্রাইভেট ব্যাংকের একটি অন্যতম দিক হলো আপনার পারফরম্যান্স অনুযায়ী আপনার স্যালারি নির্ণয় করা হয়। নিজস্ব লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে আপনার পরবর্তীতে বেতন-ভাতাদি ঝুলে থাকবে। সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সব সময় লক্ষ্য পূরণ করার দিকে নজর রাখতে হয়। এতে ব্যাংকাররা বিশেষ মানসিক প্রেসারে পড়ে।
প্রাইভেট ব্যাংক একটি সামগ্রিক লক্ষ্য নিয়ে এগোয়। এর প্রত্যেকটি ব্যাংকার তাদের নিজস্ব লক্ষ্য পূরণে দায়বদ্ধ। নিজস্ব কর্মসংস্থানে থেকে দক্ষতার পরিচয় দেয়। প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মসংস্থান পরিবেশট থাকে অনেক বেশী গোছানো, সুন্দর এবং প্রফেশনাল।
২) লোন নেয়ার ভালো সুবিধা(Profitable Opportunity)
প্রাইভেট ব্যাংকে পাবেন প্রতি বছর শেষে ১০ ভাগ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি। তাছাড়াও চার্জ ফ্রি ক্রেডিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা।
প্রাইভেট ব্যাংকে আপনি কোন রকম চার্জ ছাড়াই ক্রেডিট কার্ড, এমনকি ডেভিড কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। একইভাবে কোনরকম সুদ ছাড়াই লোন নেয়ার সুবিধা পাবেন।
ধরুন, আপনি একটি হাউস/বাড়ি নির্মাণ করবেন। তার জন্য আপনার কয়েক লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নিতে হয়। লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনি সুদে বিশেষ ছাড় পাবেন। আবার কিছু টাকা লোন নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রী সুদ মুক্ত লোনও চাইলে নিতে পারবেন।
প্রাইভেট ব্যাংকে পারফর্মিং ইনডিকেটরের মধ্য দিয়ে আপনার পারফরম্যান্স, কর্মদক্ষতা মাপা হয় তার। উপর ভিত্তি করে আপনাকে লোন এবং প্রফিটেবল সুবিধাও প্রদান করা হবে। ওই একই ইনডিকেটরের মধ্য দিয়ে কেউ তাদের মোট সেলারির থেকে 5 থেকে 7 শতাংশ বেশি স্যালারি পাবে।
আবার কেউ হয়তো স্যালারি তেমন ভালো পাবে না। তো প্রাইভেট ব্যাংকের প্রফিটেবল সুবিধার মধ্যে প্রধান সুবিধা হলোঃ যেকোনো ক্ষেত্রে অর্থাৎ বাড়ি, গাড়ি ক্রয় করা কিংবা তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনি কম সুদে লোন নিতে পারবেন। এবং তার জন্য বিশেষ মানসিক প্রেসার নিতে হবে না।
৩) ভালো স্যালারি ও ভাতা সুবিধাঃ
আমরা সবাই জানি, প্রাইভেট ব্যাংকে কতগুলো নিয়োগ পদে আছে। যার মধ্যে আছে জুনিয়র অফিসার। তাছাড়া আছে প্রবেশনারি অফিসার এবং ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার।
তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব বেতন-ভাতাদি রয়েছে। প্রাইভেট ব্যাংকে বিশেষ বেতন-ভাতাদি পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। নিচে তাদের বেতন ভাতাদি উল্লেখ করা হলো।
Management Training Officer:
সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার থেকে ৬৫ হাজার। লক্ষ্য পূরণে সার্থক হলে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বেড়ে যায়।
Probationary Officer:
সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা। লক্ষ্য পূরণে ৫ -১০ হাজার টাকা বেতন বাড়বে।
Junior Integrated Officer:
বেতন ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা।
৪)দ্রুত পদোন্নতি হয়।
বেসরকারি ব্যাংকে প্রতি বছরেই পদোন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর কিংবা সেলারি ইন্ডিকেটর পরিমাপে আপনার বেতন ভাতাদি নির্ভর করবে। যদি নিজের পারফরম্যান্স দেখে তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি পেতে চান, তবে প্রাইভেট ব্যাংক আপনার জন্য যথোপযোগী।
প্রাইভেট ব্যাংকে নিজের লক্ষ্য পূরণ করে পারফরম্যান্স দেখে সাথে সাথে প্রমোশন পাওয়ার উপায় আছে। যেখানে সরকারি ব্যাংকে কয়েক বছর, অর্থাৎ 5 থেকে 8 বছর পর পর প্রমোশন পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া সরকারি ব্যাংকের বেতন ভাতাদি প্রাইভেট ব্যাংকের মতো বেশি হয় না। সে ক্ষেত্রে বিশেষ সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধার মধ্যে প্রধান সুযোগ সুবিধা হলো চাকরির দীর্ঘস্থায়িত্বতা।
৫) পাশ করার কয়েকমাসে নিয়োগ দেয়ার সুবিধাঃ
প্রাইভেট ব্যাংকে আছে বিশেষ নিয়োগ সুবিধা। যেখানে সরকারি ব্যাংকে কয়েক মাস ট্রেনিং। এরপর আরো কিছু সময় পর গিয়ে নিয়োগ করতে হয়। সেখানে প্রাইভেট ব্যাংকে মাত্র পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরবর্তী 2 থেকে 10 মাসের মধ্যেই নিয়োগ করা সম্ভব হয়।
একইভাবে নিয়োগ করার পরবর্তীতে আপনি চাকরিতে জয়েন দিতে পারবেন। এবং এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। দ্রুত নিয়োগের চাকরি এরমধ্যে প্রাইভেট ব্যাংক জব সবার উপরে।
৬) বছর মনমতো টানা ১৫ দিন ছুটিঃ
প্রাইভেট ব্যাংকের ছুটি নিয়ে বিশেষ সীমাবদ্ধতা আছে বলে সবাই মনে করি। অথচ আপনি চাইলে প্রাইভেট ব্যাংকে টানা 15 দিন পর্যন্ত ছুটি নিয়ে নিতে পারবেন। তবে এটা সঠিক যে, প্রাইভেট ব্যাংকে কিছুদিন পরপর ছুটি নেয়া সম্ভব না। আপনাকে নিজস্ব কর্মের অন্তর্গত থেকে ছুটি নিতে হবে। প্রাইভেট ব্যাংকের নিজ থেকে সর্বোচ্চ 15 দিন ছুটি নেয়া সম্ভব প্রতি বছরে।
৭)চিকিৎসা সাহায্যে বিশেষ ওয়েলফেয়ার ফান্ড(Welfare Fund)
চিকিৎসা ব্যাপারে সাহায্য নিতে প্রাইভেট ব্যাংকের রয়েছে নিজস্ব হেয়ালথ এবং ওয়েলফেয়ার ফান্ড কছে। সেখান থেকে সকলের চিকিৎসা ব্যাপারে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। ধরুন, আপনি বড় একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলেন। যেটা কেউই আমরা চাই না।
সে রোগ অথবা অসুস্থতায় চিকিৎসার জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন। সে দিক থেকে প্রাইভেট ব্যাংকের ওয়েলফেয়ার ফান্ড আপনাকে যথাসাধ্য টাকা প্রদান করে সাহায্য করবে।
আপনার চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন অথবা কাগজ দেখিয়ে, প্রাইভেট ব্যাংক ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে বড় রকমের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। আসলে আপনার কর্ম জীবনে কাজ করার মধ্য দিয়ে যেসকল কমিশন প্রাইভেট ব্যাংক নিয়েছে। তার একটি অংশ ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে আপনার বিপদের সময় ব্যয় করা হবে।
নিজের জীবনে কখন বিপদ-আপদ চলে আসে তা কখনই বলা যায় না। অথবা পরিবারের কে কখন মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে যায় তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আপনি চাইলে প্রাইভেট ব্যাংক জব বেছে নিতে পারেন।
৮)প্রভিডেন্ড ফান্ডঃ অবসরকালীন ভাতা পাবেন।
প্রভিডেন্ট ফান্ড হ'ল একটি তহবিল, যার মাধ্যমে কোনও সংস্থা কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করার পরে তাদের অর্থ প্রদান করবে।
প্রাইভেট ব্যাংকে আপনাকে মাস শেষে যে স্যালারি দেয়া হবে, তার একটি অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে চলে যায়। যেটি আপনার কর্মসংস্থান বা কর্মস্থল ত্যাগ করার পরবর্তীতে প্রদান করা হবে। ধরুন, আপনি যদি 20 থেকে 25 বছর প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করেন। এবং সেখান থেকে চাকরি করার পর অবসর নেন। তবে সে ফান্ডে জমা কৃত টাকার পরিমাণটা হবে বেশি।
কিন্তু আপনি যদি পাঁচ থেকে দশ বছর চাকরি করার পর অবসর নিয়ে নেন। বা চাকরীচ্যুত হয়ে যান, তবে সে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা টা হবে খুব কম। অনেকক্ষেত্রে চাকরীচ্যুত হয়ে গেলে, অথবা বরখাস্ত করা হয়ে গেলে, সে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা টা দেয়া হয় না।
৯) চাকরি নিরাপত্তা বিষয়ে (Job security)
প্রাইভেট ব্যাংক জবের সিকিউরিটি কতটুকু তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন প্রাইভেট ব্যাংকের কোন চাকরি সুরক্ষা নেই। চাকরি নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় নাকি চাকরি চলে যায়। কিংবা বরখাস্ত করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা টাও বিলীন হয়ে যায়। আবার অনেকেই মনে করেন যে, প্রাইভেট ব্যাংকের অফিসার রা চাকরি নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাই করেনা। প্রাইভেট ব্যাংকে রয়েছে শতভাগ নিরাপত্তা। এরকম একেকজনের দ্বিমত আছে।
তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যেটা বুঝা গেল। প্রাইভেট ব্যাংকে যে সকল অফিসার আছে, যেমনঃ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার। তারা কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে ব্যাংকের এমডি অথবা ওই প্রাইভেট ব্যাংক শাখার৷ CEO পর্যন্ত হয়েছে। এটা অনেক বড় বিষয়। তাছাড়া এই ব্যাপারে চাকরীচ্যুত হওয়া কতটুকু নিশ্চয়তা আছে তা নিয়ে কেউ বলতে পারেনা।
প্রাইভেট ব্যাংকে বিশেষ ক্ষেত্রে পানিশমেন্ট দেয়া হয়। কোন ভুল কিংবা লক্ষ্য পূরণে মনস্থির না করা গেলে পানিশমেন্ট দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে Post Punishment দেওয়া হয়। কিংবা কখনো জব এর স্যালারি পরিমাণটা কমিয়ে দেয়া হয়।
কেবলমাত্র বড় রকমের অন্যায় কিংবা ভুল করে ফেললেই আপনাকে জব থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হবে। যদি আপনি স্বাভাবিক নিয়মে চাকরি করে যান, একইভাবে নিজের কাজ সততার সঙ্গে করে যান। তাহলে কোনো প্রাইভেট ব্যাংকের সাধ্য নেই আপনার চাকরি বরখাস্ত করার।
অবশ্যই পড়বেনঃ
প্রাইভেট ব্যাংক প্রস্তুতি ও জব প্রিপারেশন।
প্রাইভেট ব্যাংক জবের সুযোগ সুবিধা ও অসুবিধাঃ
ভারতের মহাত্মা গান্ধীর একটি বাণী বেশ প্রচলিত আছে। সেটি হলঃ “আপনি আজকে কি করছেন বা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তার উপর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে”। এ বাণীর একটি চরম তাৎপর্য আছে। যেমন ধরুন, আপনার বর্তমান সিচুয়েশনে ক্যারিয়ার Choose করাই পরবর্তী ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করবে। আপনি আজকে কি নির্বাচন করছেন, কিংবা কোনটিকে নিজের জন্য পছন্দ করছেন? তার উপর ভিত্তি করে আপনার ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।
আজকের এ পর্যায়ে গিয়ে যদি প্রাইভেট ব্যাংকে বা প্রাইভেট ব্যাংক জবকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে পছন্দ করে নেন। তবে পরবর্তীতে এটাই আপনার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবে। সে ক্ষেত্রে যদি স্যালারি মাথায় রেখে কোন সেক্টরে কাজ করেন, যেখানে কোন ধরনের আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন না। তবে এটা নিতান্তই বোকামি। আজকের কোন ফিল্ডে জব করে নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করুন।
বর্তমানে কর্মসংস্থান হিসেবে অর্থনীতি রিলেটেড গুলোর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর খুব দ্রুত উন্নতি করছে। যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলি, তাহলে সকল ধরনের ব্যাংকিং জব অনেক বেশি দুর্দান্ত এবং এক্সপেন্সিভ। বিবিএ অর্থাৎ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও একাউন্টিং অথবা বিশ্ববিদ্যালয় কমার্স সাবজেক্ট পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম পছন্দ থাকে ব্যাংকের চাকরি। সরকারি ব্যাংকে চাকরিতে যাওয়া সহজ নয়।
তাছাড়াও প্রাইভেট ব্যাংকের কিছু সুযোগ-সুবিধা অনেক। যা মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদেরকে প্রাইভেট ব্যাংকের দিকে ধাবিত করে। আপনার নিজের প্রতি যদি ভরসা থাকে যে, আপনি নিজের কর্মে নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন। তবে এই প্রাইভেট ব্যাংকিং জব আপনার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।
বাংলাদেশের 12 থেকে 13 বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং সেক্টরের একটি অপ্রত্যাশিত গ্রোথ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি ব্যাংক ছাড়াও কমার্শিয়াল প্রাইভেট ব্যাংক আছে। এবং ইসলামী শাহরিয়ার ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া কিছু বৈদেশিক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ এ দেশের বিভিন্ন ইউনিটে স্থাপিত হয়েছে।
প্রাইভেট ব্যাংক ধীরে ধীরে তাদের দাপট বৃদ্ধি করছে। তারা নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যায়ের সার্ভিস প্রদান করে কাস্টমারদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে।
মার্কেট পর্যায়ে গিয়ে প্রাইভেট ব্যাংক গুলো বেশ প্রতিযোগিতাও অনুভব করে। যেখানে কাস্টমারদের অ্যাসিস্ট্যান্ট করার সাথে খাপ খাওয়াতে তাদের নিজস্ব সার্ভিস ও ডেলিভারি কোয়ালিটিকে আরো বেশি উন্নত করতে হয়। কাজেই প্রাইভেট ব্যাংক ক্যারিয়ার ডেভলপ করতে কিছুটা হলেও আপনাকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। কারণ ঐ সমস্ত সেক্টরে প্রফেশনালরা মূলত বড় বড় টার্গেট নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ লক্ষ স্ট্যান্ডার্ড করার পারফর্ম করা লাগে।
প্রাইভেট ব্যাংক গুলো মূলত ওই তরুণ গ্রাজুয়েট নতুনদের জন্য নিজেদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিয়ে আসে। যারা ফাইন্যান্স ও ইকোনমিক এর বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে গ্রেজুয়েট লাভ করেছে। বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সমাপ্তি করে, প্রাইভেট ব্যাংকে যোগদান করতে চাইছে। তাদের জন্যই প্রাইভেট ব্যাংক বেশি প্রেফার করে।
প্রাইভেট ব্যাংকে ভালো স্যালারি প্যাকেজ আছে। তবে আপনাকে কিছু লক্ষ্য পূরণে প্রেসার নিয়ে এগোতে হবে।
প্রাইভেট ব্যাংকে নিজের সিদ্ধান্ত তৈরি করার সুযোগ আছে। যেটা তাদের জবের ক্ষেত্রে বিশেষ সন্তুষ্টি দেয়। আপনাকে সুন্দর কর্মসংস্থান ম্যানেজ করতে সুযোগ সুবিধা দিবে। একটি ভালো কর্মপরিবেশে নিজের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। লক্ষ্য পূরণে দিক দিয়ে আপনাকে হাইলি( Highly) সাপোর্ট দেয়া হবে।
এখানকার প্রফেশনালদের কে চ্যালেঞ্জিং টাস্ক পূরণ করার জন্য মোটিভেট করা হয়। যাতে করে তারা উৎসাহিত হতে পারে। প্রাইভেট ব্যাংকের নিজস্ব পলিসি আছে। রেস্পেক্টিভ পলিসি। যেগুলো মেনে চলা সকল ব্যাংকারদের জন্যই প্রযোজ্য।
ব্যাংক অথোর সই সকলের এক্সপেরিয়েন্স এবং পারফরম্যান্স অনুযায়ী বিশেষ মেধাতালিকা করতে পছন্দ করে। যেটির মাধ্যমে পরিশ্রমি ব্যাংকারদের কে বের করে আনতে বিশেষ চান্স থাকে। এতে করে একজন ব্যাংকার কিরূপ কাজ করছে, তা প্রাইভেট ব্যাংক অথরিটির কাছে প্রকাশ পায়। একইভাবে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিও অনেকাংশে এর উপর নির্ভর করে।
প্রাইভেট ব্যাংক সেক্টর এমন একটি সংস্থান যেটি আপনার কর্ম দক্ষতার উপর আপনার সেলারি প্রেফার করবে।
প্রাইভেট ব্যাংক আপনাকে একটি সুশৃংখল এবং কম্পিটিটিভ কাজ করার কর্মসংস্থান দিবে। যেখান থেকে আপনি নিজেকে মোটিভেট করতে পারবেন। এবং দ্রুত নিজেকে টার্গেট পূরণে আগ্রহী করতে পারবেন। যেটি ব্যাংকিং পলিসি অনুযায়ী আপনার ব্যাংক ক্যারিয়ারে মারাত্মক উন্নতি দিবে।
প্রাইভেট ব্যাংকে আছে প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের ব্যাপক চাহিদা। এ ব্যাপারে ব্যাংক অথরিটি নিজ থেকে আপনার উপর মনোনিবেশ করবে। তাছাড়া তারা hand-to-hand মনোভাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে। তাদের নিজস্ব পেশাদারী ট্রেনিং ও চাকরিতে অনেক কিছু শিখতে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোতে নিজস্ব দক্ষতা দেখাতে তীক্ষ্ণ করে তুলবে। তাদের রয়েছে সেরা প্রশিক্ষণ এবং ভালো শিক্ষার জন্য কিছু নামী ইনস্টিটিউট। যেখানে তারা সেরা ব্যাংকার কর্মজীবীদের কে প্রেরণ করতে উৎসাহিত করে।
একটা কথা বলতে কি, বাংলাদেশের চক্ষু দৃষ্টিতে যদি আমরা তাকাই। তবে দেখব, পাবলিক সেক্টরের যেসকল কর্মজীবীরা আছেন তারা অন্যান্য প্রাইভেট কাঠামোর থেকে বেশি গুরুত্ব পায়। যেমনটা সরকারি ব্যাংকিং জব গুলো অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রাম অঞ্চলে অনেকগুলো বেসরকারি ব্যাংক নিজেদের সার্ভিস বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছে। প্রাইভেট ব্যাংকে যারা শীর্ষস্তরের ব্যাংকার আছেন। তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমানত কোন প্রকার সুদ মুক্ত দেখে প্রদান করা হয়। আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে যে সকল লক্ষ আছে এবং তা মূলত পণ্যগুলোর পারফরম্যান্স অনুযায়ী সে লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে ভালো পজিশনে অর্জন করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি আছে। যেখানে যারা অলস কর্মজীবী রয়েছেন তাদের তেমন একটা জায়গা দেয়া হয় না।
প্রাইভেট ব্যাংকে কাজের সময় মূলত বেশি হয়। আপনাকে অনেকটা সময় ব্যাংকের বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য দিতে হয়। কর্মজীবনে প্রেসার সম্পূর্ণটাই নিজস্ব কর্মসংস্থানে সীমাবদ্ধ রাখবেন। পারিবারিক জীবনে যাতে তার কোনরকম প্রভাব না থাকে।
নিজস্ব বিনোদন এবং পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য প্রাইভেট ব্যাংকে তেমন একটা ছুটি পাওয়া যায় না। কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকলে ব্যক্তিগত জীবনে সময় ব্যয় করাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। যেটি পেশাদারদের স্বাস্থ্য অবস্থার অবনতি ঘটায়।
বাংলাদেশের যে নিজস্ব ব্যাংকিং রেগুলেশন এবং পলিসি বিভাগ আছে। সেটি সরকারি ব্যাংকিং খাতের সাথে সম্পর্ক রেখে একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের কর্মজীবীদের কে তেমন একটা পেশার মধ্যে না রাখার আহ্বান রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি বিভাগ, বেসরকারী খাতের ব্যাংকিংয়ের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিটি আপনাদের পড়ে শুনাচ্ছিঃ
সম্প্রতি সময় দেখা গিয়েছে যে, ব্যাংকের মহিলা কর্মীরা নিজেদের কার্য-দিবসে ব্যস্ত থাকার পরেও; ব্যাংকে তাদের ওভারটাইম কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রাইভেট ব্যাংক কর্মীরা হঠাৎ পদত্যাগ বা বেআইনিভাবে কোনকিছু অবসান কিংবা অবৈধ বরখাস্ত নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছে। কেউ কেউ চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পরে বিশেষ কোনো আর্থিক সুবিধা পেতে বেশ হয়রানি হয়েছে। একই কারণে বিভিন্ন রকমের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মানব সম্পদের সুষ্ঠু পরিচালনায় বিশেষ বাধা বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। উপরোক্ত ব্যাপার গুলোর উন্নতি সাধনের জন্য যে সকল বেসরকারি ব্যাংক আছে, তাদের ক্ষেত্রে কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশন প্রযোজ্য হয়েছে। যেমনঃ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, ব্যাংকগুলোতে অফিসের সময় বা কার্য সময়ের ব্যতীত সন্ধ্যা 6 টার পরে কর্মচারীদের; বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের কে ওভারটাইম কাজ করার জন্য বাধ্য করা যাবে না। তাছাড়া বিশেষ অফিসিয়াল কাজ কর্মের জন্য ব্যাংকে থাকার প্রয়োজন হলে; কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অফিসিয়াল কাজ করার মধ্য দিয়ে কোন মহিলা কর্মী যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাছাড়া ব্যাংকিং খাত গুলোতে যখন কর্মী নিয়োগ করা হয়, তখন কর্মী নিয়োগে সততা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। তাছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদেরকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অফিশিয়াল কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে বিশেষ প্রেসার কিংবা বারবার মানসিক টর্চার ব্যাপারে কোনো প্রকার পন্থা অনুসরণ করা যাবে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সংবিধান অনুযায়ী। বাংলাদেশের শ্রম আইন 2006 অনুযায়ী, এবিধান সামঞ্জস্য রেখে কোন কর্মীকে পদত্যাগ ও বরখাস্ত কিংবা অবসর গ্রহণের পরবর্তীতে আর্থিক সুবিধা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।
উক্ত বিধানটি ২০০৬-২০০৮ এর। বর্তমান চিত্র মোটেও এরমম না। প্রাইভেট ব্যাংক গুলো অনেক ভালো হয়েছে।
প্রাইভেট ব্যাংকাররা অন্যান্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পেশাদার। প্রাইভেট ব্যাংক একজন ব্যক্তির জন্য চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার হতে পারে। যারা তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি এবং নিজের পারফরম্যান্স অনুযায়ী রিওয়ার্ড নিবেন- এই মনোভাবের সিদ্ধ; তাদের জন্য প্রাইভেট ব্যাংকের ক্যারিয়ার হবে সর্বোত্তম।
তবে যদি আপনি একটি কর্মসংস্থানে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে চান, পাশাপাশি নিজের পরিবারকে ও সমান হারে সুযোগ দিতে চান। ও সময় দিতে চান। তবে প্রাইভেট ব্যাংক ব্যতীত সরকারি ক্ষেত্রে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। ভালো সেলারি ও লক্ষ্য পূরণ করে দ্রুত ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রাইভেট ব্যাংক আপনাকে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা ঠিকই দিবে। কিন্তু কাজের সুরক্ষা কতটুকু সেটা আদৌ সন্দেহজনক।
পড়ুনঃ
- ব্লগার থেকে টাকা আয় করার উপায়।
- রবি সিমের সকল কোড জানুন।
- এড দেখে টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট ২০২১
- ইউটিউব থেকে আয় করার সম্পুর্ণ গাইডলাইন।
শেষকথাঃ
আজকে কি শুধু আমি সুযোগ সুবিধা গুলি নিয়ে আলোচনা করলাম? না তা কিন্তু না। বিশেষ বিশেষ সময়ে প্রাইভেট ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধাগুলো কে তুলে নিয়ে এসেছি।
একজন নতুন ও তরুণ যে কিনা নিজের ক্যারিয়ার গঠনে উদ্বুদ্ধ; তার ক্ষেত্রে কোনটি ভাল হবে, সে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। তবে আমি প্রায়োরিটি দিব, কিছু অভিজ্ঞ এক্সপেরিয়েন্সড প্রাইভেট ব্যাংকারদের। যাদের থেকে আপনি আরো ভালো তথ্য নিতে পারেন।