ফ্রী ফায়ার (Free fire) গেম খেলা কি হারাম নাকি হালাল?

ফ্রী ফায়ার খেলা কি হারাম ?

ইন্দোনেশিয়ার একটি ঘটনা দেখিয়ে মূল আলোচনা শুরু করছি৷ ইন্দোনেশিয়া একটি বৃহৎ মুসলিম দেশ। আর সে দেশের তরুণ-তরুণী ও ছোট ছেলেমেয়েরা ফ্রী ফায়ার গেমটিকে খুব পছন্দ করত। সেখানকার ফ্রী ফায়ার Lovers রা একটা সংবাদ দেখে হঠাৎ চমকে যায়। সেটা হলোঃ তাদের একটি বড় নিউজ পোর্টালে প্রকাশ পায় যে, ফ্রী ফায়ার খেলা কি হারাম নাকি হালাল? 

পরবর্তী একই তথ্য নানা ধরনের রিপোর্ট এর মধ্য দিয়ে  একাধিক চমক ও রহস্য খুলে দেয়। যাতে প্রমাণ পায় যে, আসলে ফ্রী ফায়ার ইসলামের দৃষ্টিতে ঐ সকল অবৈধ গেমসের (Games) ক্যাটাগরিতেই পড়ে।

ফ্রী ফায়ার খেলা কি হারাম


যাই হোক প্রশ্ন হলো, কি এমন সব জিনিস আছে, যেগুলো ফ্রী ফায়ার কে একটি হারাম বা অবৈধ গেমে পরিণত করেছে?

তো আজকে আমি এ বিষয়ে অনেক বেশি ডিটেইলস এবং বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করব। সম্পূর্ণ টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।


ফ্রী ফায়ার খেলা ইন্দোনেশিয়ায় হারাম। সম্পুর্ণ ঘটনাঃ

দেখুন ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ। কারণ এখানে মুসলিম নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের প্রেক্ষাপটে যদি আলাপ-আলোচনা করি, তাহলে দেখানো যায় যে, ইন্দোনেশিয়াতে আসলে একটি ওলামা সংস্থা আছে। এটি ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন ফতোয়া, বিভিন্ন বিষয়াদি ইসলামিক দৃষ্টিতে তুলনা করে। 

একইভাবে তারা ফ্রী ফায়ার ও পাবজি এর মত গেমগুলোকে ইসলামিক দৃষ্টিতে তুলনা করে। ইন্দোনেশিয়ান MUI অর্গানাইজেশন এর নামে এটি সংস্থা আছে। তারা নিজেদেরকে পুরো বিশ্বে সমাদৃত করতে পেরেছে। এবং এটির বিভিন্ন অঞ্চলে নিজস্ব সংস্থা আছে।

Central MUI সংস্থাটির কেন্দ্র ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত। তারা আসলে অবৈধ কিংবা হারাম গেম গুলো নিয়ে কোন প্রকার ডিসকাস বা আলোচনা করে না।

বরং এই সংস্থাটি আলাপ-আলোচনা করে ঐ সকল গেম গুলো নিয়ে, যেগুলো আসলে বৈধ গেমে পড়ে নাকি অবৈধ ক্যাটাগরিতে পড়ে? যেমন ধরুন, ফ্রী ফায়ার আসলে বৈধ ক্যাটাগরিতে পড়তে পারতো। কিন্তু কিছু কারণ আছে, যেগুলো এই গেমকে হারাম ক্যাটাগরিতে ফেলে দিয়েছে।


ইসলামি সংস্থা MUI কর্তৃক ফ্রী ফায়ার ব্যানড(Banned):

ইন্দোনেশিয়ান ওলামা কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ ফ্রী ফায়ারকে হারাম গেম বলে ফতোয়া দেয়ারআগে থেকে পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কোনো কারণে একাধিক রিজেকশন তাদেরকে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছাতে বাধা দেয়। মানে হারাম বলে সরাসরি ঘোষণা করবে কিনা, এরকম অবস্থায় আসতে পারছিল না।

তাছাড়া কিছু লোকজন ইন্দোনেশিয়ার ওলামা সংস্থার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারার ব্যাপারটিতে খুশি হয়েছিল। কেননা একটি জনপ্রিয় গেম সম্বন্ধে কোন রিসার্চ না করিয়ে যদি হারাম, এমনকি ব্যঙ্গ করা হয়, তাহলে তা  তা জায়েজ হবে না। তো ফ্রী ফায়ার খেলা কি হারাম?  আপনাদের কি মনে হয়।


MPU Aceh দ্বারা ফতোয়াঃ ফ্রী ফায়ার কি হারাম নাকি হালাল?

ওই ইন্দোনেশিয়ার ঘটনায় MPU Aceh তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ফ্রী ফায়ার আসলে একটি হারাম গেম। তাদের সিদ্ধান্ত, তখনকার জুন 2019 তারিখে প্রকাশ পায়। জনসম্মুখে এ ব্যাপারে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

Aceh MPU এর কাছে গেম নিয়ে সে সময় যত রেকর্ড ছিল, সেগুলোর প্রেক্ষাপটে তারা তিন দিনের ট্রায়াল নেয়। এবং অন্যান্য গেম যেমনঃ পাবজি, ফ্রী ফায়ার এগুলোর ব্যবহার-ধীরতা কমিয়ে নিয়ে আসে। যাতে ব্যবহারকারীরা গেম খেলতে না পারে।

তখন এর নাম ছিলঃ 

Law and Impact of PUBG Games and the Like According to Islamic Jurisprudence, Information Technology and Psychology.


মজার ব্যাপার হলো, MPU নামক সংস্থাটি অলরেডি তিন বছর রিসার্চ করে নিয়েছেল যে, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে কিনা? সিদ্ধান্ত এই যে ফ্রী ফায়ার গেম খেলা কি হারাম?


Free fire গেম খেলা কেন ইসলামে হারাম হবে?

যে সকল ইনফরমেশন বা তথ্য এভেলেবেল রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে ফ্রী ফায়ার গেমকে আসলে অবৈধ গেমের কিংবা হারামের ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। এবং অবশেষে হারাম হিসেবে প্রমাণিত হয়। 

যখন ট্রায়াল' দেয়া হয় তখনকার কথা। প্রায় আগের তিন বছরে এমনি আরো অনেক রিসার্চ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রথমত, ফ্রী ফায়ার গেমে কিছুটা হলেও পর্নোলজির ছাপ আছে। তাছাড়া ফ্রী ফায়ারে যৌন আবেদনময়ী কিছু ফিমেল ক্যারেক্টার রয়েছে। যেগুলোতে ব্যবহার করা কাপড় আসলে অতটা মুসলিমিয়ানা নয়।

 

তাছাড়া ফ্রি ফায়ারের বিভিন্ন ইভেন্ট আইটেম বা ব্যবহার্য ফিমেল আইটেম, যেগুলো যৌন আবেদনময়ী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেগুলোতে নানা ধরনের সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তাদের দেয়া বিভিন্ন কালেকশন যেগুলোতে ইসলামবিরোধী ছাপ পাওহা যায়। ফ্রী ফায়ার কি হারাম না হালাল জানুন সম্পুর্ন। ফ্রী ফায়ার হারাম হওয়ার কারণ গুলোঃ

১) থিমযুক্ত যুদ্ধ এবং সহিংসতা

আসলে পাবজি মোবাইল এবং ফ্রি ফায়ার গেম এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো যুদ্ধ। যুদ্ধ মানুষের মাঝে সহিংসতা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি গেম খেলা নিয়ে যে একে অপরকে কিলিং করার মোটিভেশন থাকে, সেটা সহিংসতার উদাহরণ। পরবর্তীতে যুদ্ধ এমন একটি জিনিস যেটি আমরা চাইলে অবহেলা করতে পারবো না। 

এরকম প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে করা কোনো গেমস আদতে কারো দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে। 

MPU নামের সংস্থাটি খেয়াল করে যে, বেশিরভাগ বাচ্চারা ফ্রী ফায়ার গেমটি খেলে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যুদ্ধ নামক গেমটিতে কোন প্রকার ভালো, সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায় না। সে দিক থেকে বাচ্চাদের প্রতি ফ্রী ফায়ার খেলাকে হারাম বলে ঘোষণা করে।

আর  এটা সত্য যে, ইসলামের বিভিন্ন ফতোয়া গুলো অবশ্যই সঠিক ছিল। এবং ইন্দোনেশিয়ান সংস্থা MPU ফ্রী ফায়ার এর পাশাপাশি আরো কতগুলো ব্যাটেল রয়েল গেমকে হারাম বলে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

২) একটি প্রত্যাখ্যান পিটিশন আছে | 

MPU এর ফতোয়া জারির পর, এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য এক বা একাধিক পিটিশন ইন্টারনেটে হয়। এর মধ্যে একটি চেঞ্জ.অর্গ নামক এক ব্যাক্তির মাধ্যমে শুরু হয়। যেখানে একটি আর্জি জানানো হয় যে, ফ্রী ফায়ার গেমটি হারাম এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে নেয়া হোক।

Aceh MPU এর ফতোয়া জারির পর, এই সিদ্ধান্তের প্রত্যাখ্যানের একটি পিটিশন ইন্টারনেটে উপস্থিত হতে শুরু করে। এর মধ্যে একটি চেঞ্জ.অর্গের মাধ্যমে। যেখানে একটি আর্জি জানানো হয় যা, ফ্রি ফায়ার হারামের সিদ্ধান্তটিকে প্রত্যাখ্যান করে নেওয়া হোক।

আবেদন কালে তিনি MPU এর এরকম ক্রিয়া-কলাপ এর জন্য আফসোস করে বলেন যে, “অবিলম্বে MUI জানিয়েছিল যে, ফ্রী ফায়ার নাকি অবৈধ।"  তার মতে, এ গেমিং ইন্ডাস্ট্রির যে সকল তরুণ ছেলে মেয়েরা আছে। গেম তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করছে। 

ওই পিটিশনে ফ্রী ফায়ার হারাম সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে নেয়ার পাশাপাশি আরও বলা হয় যে, MUI যাতে তাদের সিদ্ধান্তটি আবার প্রয়োজনে প্রত্যাখ্যান  করে। এবং ফ্রী ফায়ার হারাম ফতোয়া প্রত্যাহার করে নিক।


যে সকল তথ্যসমূহ ফ্রী ফায়ার কে হারাম বলে ঘোষণা করেছেঃ

১) ইমোট সমস্যা।

ফ্রী ফায়ারে একাধিক ইমোট রয়েছে। যেগুলো ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় সময় নাবালক বাচ্চারা মসজিদে গিয়ে প্রদর্শন করত। এই নাজায়েজ কিছু ইমোট(যেমনঃ DAB একেকটি অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্রিয়া-কলাপ। যেগুলো ইসলামী নিষিদ্ধ। 

সে গুলোকে প্রদর্শন করা, পাশাপাশি ফ্রি ফায়ারে যেসকল আইটেম ব্যবহৃত হয়, সেগুলো একাধিক কাল্পনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্মিত। ফ্রী ফায়ার কি হারাম না হালাল বিস্তারিত জানুন।

পাশাপাশি এখানে ব্যবহৃত পোশাকের মধ্যে রয়েছে টেট্যো অঙ্কিত পুরো শরীর, যা ইসলামে হারাম।

২) ভার্চুয়ালি খুন/ হত্যাঃ

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে বললে, ফ্রী ফায়ার এর মধ্য দিয়ে একে অপরকে খুন বা হত্যা করার ব্যাপারটি বড় গুনাহ। যেটি ভার্চুয়ালি হয়। এখানে, মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা মানসিক চিন্তা ভাবনা এটাই থাকে যে, তাকে হত্যা করতে হবে। সেটা ভার্চুয়ালি-ই হোক না কেন। তাছাড়া গেমের মধ্য দিয়ে জিনাহ প্রবল হয়ে যাচ্ছে। 

যেমন বাংলাদেশের সদ্য গেমিং ইউটিউবার আছে। যারা বিশেষ করে মেয়ে। এবং তারা নিজ থেকেই গেমিং ইউটিউবিং করে, কোনো ইসলামি বৈধ সিদ্ধান্তে না গিয়েই। Mr. Triple R, Total Gaming ইউটিউবাররা ছেলে হয়ে মুখ না দেখিয়েই ইউটিউবিং করছে। সেখানে বাংলাদেশি মেয়ে ইউটিউবাররা যেটা করছে তা সম্বন্ধে কিছু বলছি না।

৩) গেমে প্রবল আসক্তিঃ

গেমিং ইন্ডাস্ট্রির কিছু কুফল দিক আছে। যার মধ্যে একটি অনেকেই গেমে আশক্ত হচ্ছে। আপনি হয়তো গেমে আসক্ত। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারছেন না। পরবর্তীতে গেম আসক্তির মধ্য দিয়ে ছেলেমেয়েরা আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে থাকে। যেসব বস্তু,  যা-কিছুই আল্লার ইবাদত থেকে দূরে রাখে, তা সবকিছুই হারামের মধ্যে পরিগণিত। এমনকি এতে কবিরা গুনাহ হয়। সে দিক থেকে ফ্রী ফায়ার হারাম।

৪) ব্যবহৃত গ্রাফিক্স

ফ্রী ফায়ার এ ব্যবহৃত গ্রাফিক্স, এমনকি পাবজি তে ব্যবহৃত রিয়ালিস্টিক গ্রাফিক্স নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়। ও প্রসঙ্গে গেলাম না।

ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় হলেও এটা সত্য যে গেম গুলো খেলা হারাম তার। কারণ ফ্রি ফায়ারে ইসলামে প্রদত্ত সবচেয়ে বড় তিনটি গুনাহঃ কুফর, শিরক হত্যা বিদ্যমান রয়েছে। 

৫) যৌন আবেগময়ী ক্রিয়া-কলাপঃ

ফ্রী ফায়ারে বেপর্দা নারীর বিভিন্ন ড্রেস ও ক্যারেক্টার রয়েছে। সেগুলো 99 ভাগ মানুষই না জেনেই ব্যবহার করে নিচ্ছে। এখন আপনি তো বলতে পারেন যে, আমি ছেলে ক্যারেক্টার ব্যবহার করি। আপনি মেইল ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন না কেন, যখন ফিমেল কোন ড্রেস আপনাকে দেয়া হয় ইভেন্ট দিয়ে। তখন অবশ্যই আপনি নেন। 

সে দিক থেকেই এসব ব্যাপার গ্রহণযোগ্যতা গ্রাহ্য দেয়া, এর মানে হলঃ আপনি ইসলামকে অবিশ্বাস করছেন। 

৬) কার্টুন ও এনিমেশনঃ

ইসলামে মানুষের ন্যায় তৈরি কার্টুন ও এনিমেশন আসলে হারাম। তাছাড়া গান-বাজনাও নিষিদ্ধ। 

৭) গান- বাজনা।

ফ্রী ফায়ার এর নতুন নতুন গান বাজনা আসে বলে অনেকের মতামত আছে। সে দিক থেকে কার্টুন, এনিমেশন কিংবা গান-বাজনা এগুলোতে সম্মতি দেয়ার মধ্য দিয়ে হারাম জিনিসটিকে আপনি হালাল মনে করছেন। যা আসলে কুফর।

৮) মানুষ হত্যা প্রচলিত।

ফ্রী ফায়ারে ভার্চুয়ালি মানুষ হত্যা প্রচলিত আছে। আপনি একবার ফ্রী ফায়ার গেমের কনসেপ্টের দিকে তাকান যে, 50 জনকে একটি গ্রাউন্ডে ছাড়া হবে। একে অপরকে হত্যা করে একজন বেঁচে থাকতে হবে। এটা কি ধরনের কনসেপ্ট? যেখানে মানুষ নিজেদের হত্যা করার কথা বলছে।

৯) একটি নির্মম ঘটনা নিয়ে ফ্রী ফায়ার কনসেপ্টঃ

যদি আপনি যতই বলেন না কেন। এ কনসেপ্ট কিন্তু আমেরিকার লাস ভেগাসে/এংেগলস প্রচলিত একটি অমানবিক কর্মকাণ্ড। ফলস্বরূপ যেমনটা আমরা সবাই জানি যে, কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী ক ক্যাসিনো ব্যবসায়ী একটি দ্বীপে একাধিক অর্থাৎ ৫০+ মানুষকে ছেড়ে দিত অস্ত্র দিয়ে। 

পরে একে অপরকে খুন করে শেষে একজন বেচে থাকতক। তাকে দেয়া তো মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার। এ অমানবিক কাজের কনসেপ্ট থেকে ব্যাটেল রয়েল গেম গুলো এসেছে।

মানুষ হত্যা সকল ধর্মেই নিষিদ্ধ। ইসলামে এটি দ্বিতীয় বড় গুনাহ। একজন মানুষকে হত্যা করা মানে পুরো জাতিকে হত্যা করা। ইসলামে কখনো বলা হয়নি যে, বাস্তব জগতে মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ। বরঞ্চ বলা হয়েছে শুধুমাত্র মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ। সে দিক থেকে এটা  হোক ভার্চুয়াল অথবা বাস্তবে হোক, উভয়ই নিষিদ্ধের কাতারেই পড়ে।

প্রশ্ন হলো আপনি ইসলাম কি মানেন কিনা? যদি ইসলামকে মানেন, তবে কথাগুলো আপনার কাছে তিক্ত বলে মনে হবে না। যদি ইসলামকে অমান্য করেন, তবে ব্যাপারগুলোতে আপনার সন্দেহ ও দ্বিমত থাকতেই পারে। কি ধরনের সন্দেহ আছে? সেগুলো কমেন্ট করে জানান। দেখি আপনাকে যথাযথ উত্তর দিতে পারি কিনা।

১০) বুলিং, হুমকি, স্প্যামিং, গালি-গালাজঃ

তাছাড়া এসকল গেমগুলোতে বোলিং, স্পামিং গালিগালাজ প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমনটা  চ্যাট অবস্থায় অথবা মাইক অন করে একে অপরকে গালি গালাজ করে খেলে।

একে অপরকে তুচ্ছ করে দেখা হয়। Noob, Bot বলে অপমান করা হয়। একে অপরের প্রতি হিংসাত্নক হয়ে ওঠে। যেমনটা একজন যদি অপরজনকে কিল করে নেয়, তবে সে মোটামুটি হিংসাত্মক হয়ে যায়। তা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। এমনকি মানসিক বিকারগ্রস্ত সমস্যায় ভোগে।

১১) ছেলেমেয়দের স্বাভাবিক জীবনে সমস্যা।

ফ্রী ফায়ার ছেলে-মেয়েদের  সামাজিক চলাচল, স্বাভাবিক চলাচল এবং পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেকে তো পুরো আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। দিন রাত 12 ঘণ্টা ফ্রী ফায়ার খেলছে।  ফ্রী ফায়ারে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা ব্যাপক হিংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠছে।


ফ্রী ফায়ার কেনো হালাল হতে পারে? ফ্রী ফায়ার কি হারাম না হালাল?

আমি জানি আপনাদের অনেকের কাছে ফ্রী ফায়ার গেমটি অনেক বেশি পছন্দের। গেম খেলার মধ্য দিয়ে আবার অনেকেই ইউটিউবার ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। গেম রিলেটেড আমার দেখা অনেক ব্লগার ও আছে। যারা একসময় বেকার ছিল, কিন্তু গেইম নিয়ে লেখালেখি করে এখন খুব ভালো ইনকাম করছে। 

মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। এটা অনেক বড় কথা। বেকারগ্রস্থতা থেকে মানুষ মুক্তি পাচ্ছে। এটা অনেক বড় কথা। তাছাড়া এই যে করোনা মহামারীর সময় লকডাউন পরিস্থিতি। তখন ছেলে মেয়েরা বা তরুণ-তরুণীরা যুবকেরা কি করবে? কীভাবে সময় কাটাবে? এটাও দেখার বিষয় ছিল। 

এই একটি সুযোগে হাজার হাজার, লাখ লাখ ছেলেমেয়ে পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেত। মাদকে আসক্ত হয়ে নিজের জীবন ধ্বংস করত। কিন্তু ফ্রী ফায়ার এর মত গেমগুলো এন্টারটেইন দিয়ে তাদেরকে ঘরের মধ্যে রেখেছে। সবাইকে ঘরে রেখে সুস্থ রেখেছে।  কারণ হলো যে,  ফ্রি ফায়ার গেম থাকার কারণেই তারা ঘরে আবদ্ধ ছিল। বেশি হাঁটাহাঁটি করে নি। যেখানে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারত।

ওই দিক থেকে ফ্রী ফায়ার পাবজি গেম গুলো কিন্তু উপকার করেছে।


ফ্রী ফায়ার গেম হালাল ভাবে খেলার উপায় কি?

ফ্রী ফায়ার খারাপ দিকগুলো থেকে আপনি যদি নিজেকে সেভ রাখতে পারেন। যেমন ধরুন, নিজে একটি মেইল ক্যারেক্টার নিবেন। যে কোন ধরনের আইটেম ব্যবহার করা উচিত হবে না। তাছাড়া free ফায়ার এর ফুল কনসেপ্ট যেটি, সেটিকে  আপনি সমর্থন না করেন কোন প্রকার খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি না নিয়ে, হারাম মনে করে খেলে যান। তবে আমার মনে হয় এতে আপনার গুনাহ কম হবে, অথবা না-ও হতে পারে।

তবে ফ্রী ফায়ার একটি খারাপ দিকঃ 

যেটি মনে করি, সেটি হল ডায়মন্ড টপ আপ। আপনারা অনেকেই হয়তো নিজের টাকা খরচ করে ডায়মন্ড টপ আপ করেন। কিংবা নিজের খানা, হাতখরচ এগুলো থেকে ডায়মন্ড টপ আপ করেন। 

কিন্তু এমন অনেকেই আছে, যারা বাপ-মায়ের টাকা চুরি করে নিয়ে ডায়মন্ড টপ আপ করে। তারা হাজার হাজার টাকা কারণে-অকারণে নষ্ট করে দিচ্ছে শুধুমাত্র ফ্রী ফায়ার এর পিছনে। এতে দেশ খুব বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন ধরুন, দেশ থেকে টাকা কোম্পানিগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। তো এই ব্যাপারটি অসমর্থিত আমার পক্ষে।

কাজেই, ফ্রী ফায়ার কে হালাল ভাবে খেলার জন্য আপনাকে ডায়মন্ড টপ আপ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।


শেষকথাঃ

আজকে জানলাম, ফ্রী ফায়ার খেলা হারাম না হালাল। যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়, ক্ষমা করে দিবেন। কিংবা আপনার মনে হয় যে, কথাটা ঠিক। তবে কমেন্ট করে জানাবেন। আর ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। 

আদতে গেইম ইন্ডাস্ট্রি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। যেমন টা ধরুন, অসংখ্য ইউটিউবার আছে যারা আয় করছে। তারা আয় করার সোর্সটা কিন্তু বিদেশ বা বাইরের দেশ থেকে পাচ্ছে। কারণ গুগোল কোন এদেশীয় পণ্য নয়। সে দিক থেকে দেশে বাড়তি ডলার ইনকাম হচ্ছে। অর্থনীতিও ভালো হচ্ছে।

মোটকথা ভালো লাগলে শেয়ার করবেন এই জানিয়ে সবাইকে বিদায় জানাচ্ছি ধন্যবাদ


Rakib

রাকিব "এক্সপার্ট বাংলাদেশ" এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক। সে অবসর সময়ে ব্লগিং ও লেখালেখি করতে ভালোবাসে। তাছাড়াও, অনলাইনে নতুন কিছু শেখা তার প্রধান শখ।

5 Comments

কমেন্ট করার মিনতি করছি। আমরা আপনার কমেন্টকে যথেস্ট মূল্য প্রদান করি। এটি আমাদের সার্ভিসের অংশ।

তবে কোনো ওয়েবসাইট লিংক প্রকাশ না করার অনুরোধ রইল।

  1. ভাই আমি হালাল মনে খেল্লাম কিনতু মানশু মারছি এটাত হারামি করছি তাই না,,তাহলেত গুনা থেকে মাফ পাওয়ার কন উপায় নেই

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখুন, ভার্চুয়ালি আপনি মানুষ নয়, বরং কোডিং করা কিছু এভেটার মারছেন। ঐ হিসেবে কোনো পাপ তো হচ্ছে না। কিন্তু, বর্তমানে ফ্রী ফায়ার পুরোপুরি একটা হারাম গেম। দুঃখিত।

      Delete
  2. যদি নিজেকে কন্ট্রোল করে খেলতে পারি তাহলে কি গুনাহ হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দূঃখিত, বর্তমানে এই গেমটি পুরোপুরি হারাম।

      Delete
  3. ফ্রী ফায়ার গেমটি খেলা কী বড় শিরক এর অন্তর্ভুক্ত?

    ReplyDelete
Previous Post Next Post