অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও প্রতিকার টিপ্সঃ
চুল পাকা কি কোনো সাধারণ ব্যাপার?
চুল পাকা যে একেবারেই অস্বাভাবিক তা কিন্তু না। বর্তমান যুব সমাজের চুল পাকার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। যুব বয়সেই হয়তো আপনার বা কারো চুল পেকে বৃদ্ধদের মতো সাদা হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ভৌগোলিক কারণে দক্ষিণ-পুর্ব এশীয়দের মাথার চুল কালো। তাই কোনো সাদা-কালো চুলের কাউকে দেখলেই ওটা চোখে পড়ে। আজকে আমরা জানবো অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও এর রোধ করার উপায় সম্বন্ধে।
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ কি
আমাদের চামড়ায় মেলানোসাইট নামক এক ধরনের কোষ থাকে । যা থেকে মেলানিন উৎপাদিত হয়। মেলোনিন উৎপাদনের উপরই নির্ভর করবে আপনার চুল কালো থাকবে, নাকি পেকে যাবে। সাধারণত যাদের কম পরিমাণে মেলানিন উৎপাদিত হয় তাদের ত্বকের রঙ সাদা হয়।
এবং মেলানিন এর বেশি উৎপাদন হলে ত্বকের রঙ কালো হয়। চুলের ক্ষেত্রেও একই কথা । কোনো কারণে চুলের গোড়ার মেলানোসাইট কোষ নিষ্ক্রিয় গেলে মেলানিনের উতপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে করে চুল পাকা শুরু করে।
কি কারণে চুল পাকে?
ধরুন কেউ রাস্তা দিয়ে হাটছে। যখন তার মাথা কাচা-পাকা চুলে ভর্তি হবে, তখন খুব সহজেই আমাদের চোখে এটা বাধবে। এখনকার সময়ে টিনেজার থেকে শুরু করে স্কুল বালক-বালিকা, কিছু সংখ্যকের মাঝেই এ সমস্যা দেখা যায়। সাধারণত চুল পাকার কতগুলো সাধারণ কারণ আছে। যেমনঃ
1. Genetics বা জিনগত কারণ।
যদি আপনার বা কারোর চুল কম বয়সেই পেকে থাকে, তাহলে এটা মনে করতে পারেন , আপনার বংশের কারো চুল কম বয়সেই সাদা হয়েছে। সেটা হতে পারে আপনার বাবা, অথবা দাদা-দাদী যে কেউ। অল্প বয়সে চুল পাকার কারন
এখন জিনগত কাঠামোর উপরই আমাদের দেহের গঠন নির্ভর করে। কাজেই একে পরিবর্তন করা অসম্ভব। আর তাই এ ব্যাপারটিকে মেনে নেয়াই উচিত। সত্যি বলতে চুল অল্প বয়সে সাদা হওয়ার ৮০% চান্স থাকে জেনেটিক্স এর।
2. মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা।
সকলেই একের পর এক দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের স্বীকার হয়। সেটা হোক একটি স্কুল পড়ুয়া ছেলে, কিংবা আপনি। সকলেরই কোনো না কোনো মানসিক চাপ থাকে। তবে কারো কারো মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপি থাকে। যা তাদের চুলের রঙ পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
দীর্ঘদিন ব্যাপী মানসিক চাপ যে সকল সমস্যার তৈরী করেঃ
1.ঘুমে ব্যঘাত। মানসিক চাপ মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
2.মনে উদ্বেগ তৈরী করে। হতাশার জন্ম দেয়।
3.ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি করে।
4.উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাড়াঁয়
মানসিক চাপ আমাদের চুলেও প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমদের চুলের গোড়ায় মেলোনিন উতপাদন বন্ধ করে দেয়।
3. Autoimmune রোগ।
Autoimmune রোগ এক ধরনের দৈহিক সমস্যা। এই রোগের আরেকটি কারণ চুলের রং সাদা হয়ে যাওয়া। কখনো কখনো এ রোগের কারণে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের কোষের উপর আক্রমণ করে
4. থাইরয়েড ডিস-অর্ডার।
দেহের থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোনজনিত কারনেও মাথার চুল পেকে যায়। আমাদের দেহের থাইরয়েড দেখতে প্রজাপতি-আকৃতির। দেহের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া-কলাপে থাইরয়েড গ্রন্থির ভূমিকা আছে। থাইরয়েডের সুস্থতার উপর অনেকাংশই আমাদের চুলের রঙ নির্ভর করে।
5. ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি।
কম বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই ভিটামিন বি-১২ এর অভাবকে নির্দেশ করে। ভিটামিন বি-১২ দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন বি-১২ আমাদের চুলের বৃদ্ধি এবং কালো রঙ বজায় রাখতে অসামান্য অবদান রাখে।
আমাদের রক্তের লোহিত রক্ত-কণিকার সুস্থ্যতার অনেকটাই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর উপর নির্ভর করে। ভিটামিন বি-১২ এর অভাব, চুলের কোষগুলোকে দুর্বল করে দেয়। আবার মেলানিন প্রোডাকশনে প্রভাব ফেলে।
6. ধুমপান।
অল্প বয়সে চুল পাকার সাথে ধুমপানের ভালো রকমের কানেকশন আছে। ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন। তাছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। চুল পড়ে যাওয়ার পিছনেও ধুমপানের হাত আছে। সিগারেটের নানা টক্সিন আমাদের চুলে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমি আমার পারসোনাল অভিপ্রায় দিচ্ছি, আমাদের ক্লাস ৯ এ থাকতে একটা ছেলে ধুমপানে আসক্ত ছিল। তার চুলগুলো খোচা-খোচা পাকা ছিল।
অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করার উপায়
চুল পাকার প্রতিরোধ মূলত চুল পাকার কারণের উপরই বেশি নির্ভর করবে। যদি জিনগত কারণে চুল অল্প বয়সে সাদা হয়, তবে এক কথায় সম্ভব নাহ!! চুলের রঙ করা ছাড়া কোনো ভাবেই সম্ভব না। জিনগত কোনো গঠনই প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবর্তন করা সম্ভব না। সেটা হোক আপনার উচ্চতা অথবা চুলের রঙ পরিবর্তন।
যদি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে চান, তাহলে পরামর্শ নিন। এ বিষয়ে যদি অন্য কোনো কারণে চুল পাকা আরম্ভ করে, তাহলে নিশ্চয়ই এর প্রতিরোধ করা সম্ভব। আবার যদি আপনার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে কোনো রকমের সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে এর চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। আবার, ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি থাকলেও তা ঔষধ আকারেও নেয়া যায়। এর মূল্য কম।
আর যদি পারেন, মাথায় তেল ব্যবহার করতে পারেন। মাথায় তেল দেয়ার নানাবিধ উপকার আছে, বিশেষ করে সরিষার তেল।